ড্রাইভিং লাইসেন্স হল সরকার কর্তৃক প্রদত্ত একটি আনুষ্ঠানিক অনুমতি যা একজন ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট ধরণের যানবাহন চালানোর বৈধ অধিকার প্রদান করে। এটি মূলত একটি ব্যক্তির ড্রাইভিং দক্ষতা, নিরাপত্তা সংক্রান্ত জ্ঞান এবং যানবাহন চালানোর উপযুক্ততা যাচাই করার পর প্রদান করা হয়।
ড্রাইভিং লাইসেন্স কেন প্রয়োজন?
ড্রাইভিং লাইসেন্স শুধু একটি কার্ড নয়, এটি আইনগতভাবে একজন চালকের দক্ষতা এবং উপযুক্ততার প্রমাণস্বরূপ। এটি নিম্নলিখিত কারণগুলির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ:
- আইনি অনুমোদন: বাংলাদেশে বা অন্য যে কোনো দেশে বৈধভাবে গাড়ি চালানোর জন্য এটি অপরিহার্য।
- পরিচয়পত্র হিসাবে ব্যবহার: এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি নথি যা বিভিন্ন কাজে পরিচয়পত্র হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
- যানবাহন বীমার জন্য প্রয়োজনীয়: যানবাহনের বীমার জন্য এটি আবশ্যক।
- ট্রাফিক আইন মেনে চলার জন্য জরুরি: কোনো ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করলে পুলিশ বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এটি যাচাই করতে পারে।
- আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি: কিছু ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং পারমিটের (IDP) মাধ্যমে বিদেশে গাড়ি চালানোর অনুমতি পাওয়া যায়।
Best Car Insurance in Bangladesh
Looking for the best car insurance in Bangladesh? Discover top companies, coverage options, and pricing tips in our detailed guide.
Read Full Articleড্রাইভিং লাইসেন্সের ধরন
বাংলাদেশে বিআরটিএ (বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ) বিভিন্ন ধরনের ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করে:
১. শিক্ষানবিশ বা লার্নার লাইসেন্স
এটি একটি অস্থায়ী লাইসেন্স যা নতুন চালকদের প্রশিক্ষণের জন্য প্রদান করা হয়। এর বৈধতা সাধারণত ৩ মাস, যার পর পরীক্ষা দিয়ে স্থায়ী লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হয়।
২. অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স
যেসব ব্যক্তি ব্যক্তিগত বা অ-বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে যানবাহন চালাতে চান, তাদের জন্য এই লাইসেন্স প্রদান করা হয়।
যে যানবাহনের জন্য অপেশাদার লাইসেন্স দেওয়া হয়:
- প্রাইভেট কার
- মোটরসাইকেল
- মাইক্রোবাস
- অটোরিকশা ইত্যাদি
৩. পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স
যেসব চালক বাণিজ্যিকভাবে যানবাহন চালান, যেমন বাস, ট্রাক বা ট্যাক্সি চালক, তাদের জন্য এই লাইসেন্স প্রদান করা হয়।
যে যানবাহনের জন্য পেশাদার লাইসেন্স দেওয়া হয়:
- বাস
- ট্রাক
- ট্যাক্সি
- অ্যাম্বুলেন্স
- কাভার্ড ভ্যান ইত্যাদি
৪. আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং পারমিট (IDP)
যারা বিদেশে গাড়ি চালাতে চান, তারা আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং পারমিটের জন্য আবেদন করতে পারেন, যা নির্দিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে বৈধ।
ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্যতা
ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য কিছু মৌলিক যোগ্যতা রয়েছে, যা নিম্নরূপ:
বয়সসীমা
- লার্নার লাইসেন্স: ন্যূনতম ১৮ বছর
- অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স: ন্যূনতম ১৮ বছর
- পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স: ন্যূনতম ২১ বছর
শিক্ষাগত যোগ্যতা
- পেশাদার লাইসেন্সের জন্য ন্যূনতম অষ্টম শ্রেণি পাস।
- অপেশাদার লাইসেন্সের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন নেই।
স্বাস্থ্য পরীক্ষা
- চোখের পরীক্ষা ও সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট থাকতে হবে।
বিআরটিএ ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদন প্রক্রিয়া
বাংলাদেশে বৈধভাবে যানবাহন চালানোর জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স অপরিহার্য। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের দায়িত্বে রয়েছে। এখানে, আমরা বিআরটিএ ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করব।
ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রকারভেদ
ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রধানত দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত:
- অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স: ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য।
- পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স: বাণিজ্যিক বা পেশাদার উদ্দেশ্যে।
আবেদন করার পূর্বশর্ত
ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করার আগে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে:
- লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স: পূর্ণাঙ্গ ড্রাইভিং লাইসেন্সের পূর্বশর্ত।
- বয়স: অপেশাদার লাইসেন্সের জন্য ন্যূনতম ১৮ বছর এবং পেশাদার লাইসেন্সের জন্য ন্যূনতম ২১ বছর।
- শিক্ষাগত যোগ্যতা: কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি পাস।
- স্বাস্থ্য: মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে।
শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া
শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে নিম্নলিখিত ধাপগুলি অনুসরণ করুন:
- অনলাইন অ্যাকাউন্ট তৈরি: বিআরটিএ সেবা পোর্টালে (https://bsp.brta.gov.bd/) আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) ব্যবহার করে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন।
- প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস প্রস্তুত করুন:
- সদ্য তোলা ছবি
- রেজিস্টার্ড ডাক্তারের মেডিকেল সার্টিফিকেট
- জাতীয় পরিচয়পত্রের স্ক্যান কপি
- বর্তমান ঠিকানার প্রমাণ (যদি NID-তে উল্লেখিত ঠিকানা থেকে ভিন্ন হয়)
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদের স্ক্যান কপি
- অনলাইন আবেদন পূরণ: সেবা পোর্টালে লগইন করে নির্ধারিত ফরম পূরণ করুন এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস আপলোড করুন।
- ফি প্রদান: অনলাইনে নির্ধারিত ফি পরিশোধ করুন।
- লার্নার লাইসেন্স গ্রহণ: আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে নির্ধারিত সময়ে লার্নার লাইসেন্স সংগ্রহ করুন।
পূর্ণাঙ্গ ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া
লার্নার লাইসেন্স প্রাপ্তির পর পূর্ণাঙ্গ ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য নিচের ধাপগুলি অনুসরণ করুন:
- প্রশিক্ষণ গ্রহণ: লার্নার লাইসেন্স প্রাপ্তির পর কমপক্ষে ২-৩ মাস ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ নিন।
- পরীক্ষার জন্য আবেদন: নির্ধারিত সময়ে লিখিত, মৌখিক এবং ফিল্ড টেস্টের জন্য আবেদন করুন।
- পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া: সকল পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হলে পূর্ণাঙ্গ ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করুন।
- বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান: বিআরটিএ অফিসে গিয়ে ডিজিটাল ছবি, স্বাক্ষর এবং আঙ্গুলের ছাপ প্রদান করুন।
- স্মার্ট কার্ড সংগ্রহ: সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে এসএমএস এর মাধ্যমে জানানো হবে এবং নির্ধারিত সময়ে স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করুন।
প্রয়োজনীয় ফি
ড্রাইভিং লাইসেন্সের বিভিন্ন ধাপের জন্য নির্ধারিত ফি রয়েছে। সর্বশেষ তথ্যের জন্য বিআরটিএর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট (https://brta.gov.bd/) পরিদর্শন করুন।
নবায়ন প্রক্রিয়া
ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে নবায়ন করতে হবে। নবায়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যের জন্য বিআরটিএর ওয়েবসাইট দেখুন।
আরো জানুন: ঘরে বসে কিভাবে অনলাইনে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করবেন?
উপসংহার
বিআরটিএ ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন প্রক্রিয়া এখন সহজ এবং অনলাইন ভিত্তিক। উপরের ধাপগুলি অনুসরণ করে আপনি সহজেই আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে পারেন। নিরাপদে গাড়ি চালান এবং সড়ক নিরাপত্তা বিধি মেনে চলুন।